স্পোর্টস ডেস্ক: সনি একাই ম্যাচ জেতাতে পারেন। যেমন মেসি। সনি হলো বাংলাদেশের ফুটবলে মেসি। তার সঙ্গে খেলতে পেরে আমি গর্বিত।’ বন্ধু সনি নর্দেকে এভাবেই প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন ওয়েডসন এনসেলমে। এটা ২০১৩ সালের গল্প।
সে বছরই বন্ধু নর্দের হাত ধরে শেখ জামালের জার্সিতে বাংলাদেশের ফুটবলে পা রেখেছিলেন ওয়েডসন। হাইতিয়ান দুই বন্ধুর জাদুতে গ্যালারিতে বেড়ে গিয়েছিল দর্শক উপস্থিতিও। শেখ জামালকে উপহার দিয়েছিলেন ফেডারেশন কাপ ও লিগ শিরোপা। নর্দের সমকক্ষ তারকা খ্যাতি না পেলেও কোনো অংশে কম ছিলেন না ওয়েডসন। কিন্তু সমকক্ষ ভাবা তো দূরের কথা, নিজেকে নর্দের আড়ালেই রাখতে পছন্দ করতেন তিনি। চার বছরের ব্যবধানে বন্ধুর প্রতি এতটাই সম্মান বেড়েছে, বয়সে তিন বছরের ছোট নর্দেকে এখন ‘দ্বিতীয় বাবা’ ভাবেন ওয়েডসন।
সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে ছয় মাসের চুক্তিতে আবার তিনি বাংলাদেশে। বুধবার রাতে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের আবাসিক ক্যাম্পে সনির প্রসঙ্গ উঠতেই বলে দিলেন অভিভাবক হিসেবে সনি কেমন, ‘সনি আমার দ্বিতীয় বাবার মতো। শুধু ফুটবল নয়, সব জগতেই সনি আমার দ্বিতীয় অভিভাবক। আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, সব সময় সনির পরামর্শ নিয়ে চলি। সে-ই আমাকে ফুটবলের পেশাদার জগৎ চিনিয়েছে। ওর জন্যই আমি এখন সবকিছু মিলিয়ে ভালো আছি।’ আহ, বন্ধু সনির কানে যদি পৌঁছাত কথাগুলো!
নর্দে ও ওয়েডসনের বাড়ি হাইতির একই এলাকায় হলেও তাঁদের পরিচয় হয়েছে অনেক পরে। বর্তমানে মোহনবাগানে খেলা সনি বড় হয়েছেন আর্জেন্টিনায়। ফুটবলে শিকড়টা তাঁর বোকা জুনিয়র্সে গাঁথা। হাইতিতে অবস্থানকালে ওয়েডসন শুধু নামই শুনেছেন নর্দের, ‘আমার বাড়ি থেকে সনির বাড়ির দূরত্ব ২০-২৫ মিনিট। কিন্তু আমি সনিকে চিনতাম না। কারণ সে বড় হয়েছে আর্জেন্টিনায়। কিন্তু সনি যখন হাইতি জাতীয় যুবদলের হয়ে খেলা শুরু করল, তখনই আমি ওর নাম শুনেছি। পরবর্তী সময়ে আমার বন্ধুর মাধ্যমে যখন বাংলাদেশে খেলার প্রস্তাব দেয় ও, তখন রাজি হয়ে যাই। বাংলাদেশে এসেই আমি ওকে প্রথম দেখেছি।’
অথচ ২০১৩-১৪ মৌসুমে দুই বন্ধু যুগল প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। সনির সহযোগিতায় ২৬ গোল করেছিলেন ওয়েডসন। মৌসুম শেষে সনি কলকাতার মোহনবাগানে পাড়ি জমালেও ওয়েডসন থেকে যান শেখ জামালে। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ১৮ গোল করে টানা দ্বিতীয়বার প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। গত বছর নভেম্বরে শেখ জামাল ধানমন্ডি ছেড়ে ওয়েডসন পাড়ি জমিয়েছিলেন কলকাতার ইস্টবেঙ্গলে। ইস্টবেঙ্গলে নাম লেখানোর আগে ২০১৫-১৬ মৌসুমের প্রথম পর্বেও করেছেন নয় গোল।
প্রিয় বন্ধুকে কলকাতায় গিয়ে অবশ্য পেয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী রূপে। ওয়েডসন যখন গায়ে চাপিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের জার্সি, সেখানে নর্দে যে আলো ছড়াচ্ছেন মোহনবাগানে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাবে খেললেও তাঁদের বন্ধুত্ব ছিল মানিকজোড়ের মতোই, ‘ভারতে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব। কিন্তু আমরা মাঠের বাইরে একসঙ্গে আড্ডা দিতাম। নিজেদের ভালো-মন্দ শেয়ার করতাম। কিন্তু খেলতে নামলে কেউ কাউকে চিনতাম না।’
তবে প্রিয় বন্ধুর চেয়ে একটি জায়গায় পিছিয়ে ওয়েডসন। সনি বর্তমানে হাইতি জাতীয় দলের নিয়মিত ফুটবলার হলেও ওয়েডসনের সে সৌভাগ্য হয়নি। দেশের ডাক আসে না তাঁর কাছে। তবু সান্ত্বনা, ২০১২ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলা হয়েছিল তাঁর।